বাংলাদেশে যেসব কারণে এত জনপ্রিয় ইমো

২০২০ সালে ইমোতে নয় হাজার কোটির বেশি মেসেজ পাঠিয়েছেন বাংলাদেশিরা
মেসেজিং অ্যাপ ইমো তাদের বার্ষিক প্রতিবেদনে জানিয়েছে ২০১৯ সালের তুলনায় গত বছর তাদের অ্যাপ ব্যাবহার করে বাংলাদেশিদের পাঠানো মেসেজের সংখ্যা বেড়েছে ৮ শতাংশের বেশি।
বছর জুড়ে বাংলাদেশি ইমো ব্যবহারকারীরা সাড়ে নয় হাজার কোটির বেশি মেসেজ এবং আড়াই হাজার কোটির বেশি অডিও-ভিডিও কল করেছে।
এর মধ্যে তিন হাজার কোটির মত রয়েছে আন্তর্জাতিক মেসেজ আর দেড় হাজার কোটির বেশি আন্তর্জাতিক অডিও-ভিডিও কল রয়েছে।
মেসেজিং অ্যাপ কোম্পানিটি এক বিবৃতিতে বলছে, “বাংলাদেশিদের ইমোর ব্যবহার রেকর্ড ছুঁয়েছে।”
গণমাধ্যমকে পাঠানো বিবৃতিতে ইমো’র ভাইস প্রেসিডেন্ট বাংলাদেশিদের এত এই প্রবণতাকে ‘অভূতপূর্ব’ বলে উল্লেখ করেছেন।
কারা, কোথায় পাঠাচ্ছেন এত বার্তা
ইমো অনেক বেশি জনপ্রিয় বিভিন্ন দেশে কর্মরত বাংলাদেশের অভিবাসী কর্মী ও তাদের পরিবারের সদস্যদের কাছে।
যে কোন অভিবাসী কর্মী ও তাদের আত্মীয় স্বজনদের সাথে কথা বললেই জানা যাবে তাদের মোবাইল ফোনে ইমো ইন্সটল করা আছে।
যেমনটা বলছিলেন একটি ডেলিভারি সার্ভিসের কর্মী আব্দুল কাইয়ুম।

ছবির উৎস,GETTY IMAGES
তিনি বলছেন, “আমার নিজের ভাই মালয়েশিয়া থাকে। ফুপাত ভাই, খালুসহ আরও আত্মীয় বিদেশে থাকে। ওনাদের সাথে ইমোতেই কথা বলতে হয়। কারণ ওনারা সবসময় ইমোতেই কল দেয়। আমি অফিসের কাজে হোয়াটসঅ্যাপ ব্যবহার করি কিন্তু দেখা যাইতেছে অন্যদের কাছে হোয়াটসঅ্যাপ বা ভাইবার এইসব নাই।”
মিরপুরের রাবেয়া খাতুনের স্বামী থাকেন সৌদি আরব। তিনি বলছেন, “ইমো না থাকলে জিজ্ঞেস করে- নাই কেন? তাই আমাদেরও ইমো নামাইতে হইছে। ইমোতে সব নম্বর খুইজা পাই। কিন্তু অন্যগুলা নামাইয়া দেখছি। অনেক নম্বর খুইজা পাওয়া যায় না।”
রাবেয়া খাতুনের স্বামী যে দেশে থাকেন সেই সৌদি আরবেই সবচেয়ে বেশি আন্তর্জাতিক মেসেজ ও কল আদান প্রদান হয়েছে বলছে ইমোর বাৎসরিক রিপোর্ট বলছে।
বাংলাদেশি অভিবাসী শ্রমিকদের মধ্যে সবচেয়ে বড় সংখ্যকই কাজ করছেন এই দেশটিতে।
আরো পড়ুন:
যে পাঁচটি দেশের সাথে সবচেয়ে বেশি বার্তা আদান প্রদান হয় তার মধ্যে তার মধ্যে দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে ওমান।
তারপর মালয়েশিয়া, সংযুক্ত আরব আমিরাত ও কাতার। সবগুলো দেশই বাংলাদেশে অভিবাসী কর্মীদের পছন্দের গন্তব্য।
বাংলাদেশিদের মধ্যে অনলাইন ব্যবহারের প্রবণতা ২০২০ সালে অনেক বেড়েছে করোনাভাইরাস সংক্রমণের কারণে যেহেতু সরাসরি যোগাযোগ অনেকটা কমে গিয়েছিল।
যে কারণে বাংলাদেশিদের মধ্যে ইমো এত জনপ্রিয়
গ্রামীণফোনের চীফ ডিজিটাল অ্যান্ড স্ট্র্যাটেজি অফিসার সোলায়মান আলম মূল দুটি কারণ উল্লেখ করেছেন।
তিনি বলছেন, “ইমোর ব্যাবহারের জনপ্রিয়তার শুরু মধ্যপ্রাচ্যে। এর একটি বড় কারণ হল মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতে বিশ্বের অন্যান্য জনপ্রিয় যেসব মেসেজিং অ্যাপ রয়েছে সেগুলোর ব্যাবহার নিষিদ্ধ। বাংলাদেশের অভিবাসীদের তাই ইমো ব্যবহার করতে হচ্ছে। আর বাংলাদেশেও তাই তাদের আত্মীয়দের ইমো ইন্সটল করতে হচ্ছে।”

ছবির উৎস,GETTY IMAGES
তার ভাষায় অন্য আর একটি কারণ হল ইমোতে ইন্টারনেট ব্যাবহার সাশ্রয়ী।
“ইমোতে মেসেজ কমপ্রেসড হয়ে যায়। অর্থাৎ এতে ফাইল সাইজ ছোট হয়ে আসে। অন্য মেসেজিং অ্যাপের তুলনায় ইন্টারনেট ডাটা কম ব্যবহার হয়। তাই মধ্যপ্রাচ্যে আমাদের যে ভাইয়েরা রয়েছেন তাদের জন্য অন্য অ্যাপ ব্যাবহারের চাইতে ইমোর ব্যবহার সাশ্রয়ী। তবে এর একটি অসুবিধা হল এর ফলে ভিডিও বা অডিওর মান খারাপ হয়ে যায়। কিন্তু সবারতো প্রফেশনাল কোয়ালিটির অডিও-ভিডিও দরকার নেই।”
ব্যবহারকারীর গোপনীয়তা ও তথ্য নিরাপত্তা
বিশ্বজুড়ে প্রায় ১৫০টিরও বেশি দেশে ৬২ ভাষায় ২০ কোটিরও বেশি মানুষ ইমো ব্যবহার করলেও এই অ্যাপ নিয়ে অবশ্য অনেকের অভিযোগও রয়েছে।
অ্যাপটি ইন্সটল করা মাত্রই একের পর এক বিরতিহীন নোটিফিকেশন আসতে থাকে। অপরিচিত লোকজনের কাছ থেকে মেসেজ আসে, তারা এখন ইমোতে আছেন, কেউ ইমো ব্যাবহার শুরু করেছেন সেসব তথ্য ছবিসহ দেখা যায়।
আপনি চেনেন না, আপনার ফোনে যার নম্বর নেই তাদের কাছ থেকেও মেসেজ আসে।
এর অর্থ হল অন্যদের কাছেও আপনার মেসেজ চলে যাচ্ছে সেটি হয়ত আপনি জানেনও না।
ইমোতে আপনার তালিকায় থাকা বন্ধুদের যারা বন্ধু তাদের পোস্টও দেখা যায়।
এর কারণ হল আপনার কন্টাক্টে যারা আছেন আর তাদের সাথে যাদের ইমোতে যোগাযোগ, তাদের মধ্যে এক ধরনের যোগাযোগ প্রতিষ্ঠিত হয়ে যায়।
এসব কারণে অনেকেই ইমোতে নিরাপদ বোধ করেন না।
সোলায়মান আলম বলছেন, “এগুলো খুব সহজেই নিয়ন্ত্রণ করা যায়। অন্যসব অ্যাপের মতো ইমোর সেটিংস-এ গিয়ে মাত্র দশ পনের মিনিট সময় ব্যয় করলেই আপনি নিজেকে নিরাপদ করতে পারেন। এসব নোটিফিকেশন বন্ধ করতে পারেন, প্রাইভেসি বাড়িয়ে নিতে পারেন।
”এটা হয়ত অনেকেই করেন না, জানেন না অথবা প্রয়োজন আছে বলে মনে করেন না। বিষয়টি ব্যবহারকারীর উপর নির্ভর করে,” বলেন সোলায়মান আলম। বিবিসি